দখিনের খবর ডেস্ক ॥ ছয় মাসের বকেয়া উপবৃত্তির টাকা পেতে যাচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই অর্থ শিক্ষার্থীদের মায়েদের মোবাইলে পাঠানো হবে বলে উপবৃত্তি প্রকল্প থেকে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে জানা গেছে, ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে এক কোটি ৪০ লাখ ক্ষুদে শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারক চক্র মায়েদের মোবাইলে ফোন করে নগদের পিন নম্বর, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় খুবই সতর্কতার সঙ্গে নতুন অর্থ মায়েদের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় এক বছর উপবৃত্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ সময়ের বকেয়া অর্থ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মায়েদের কাছে পাঠানো হবে। প্রাথমিকে উপবৃত্তির প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব ইউসুফ আলী বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মায়েদের নগদ অ্যাকাউন্টে বকেয়া ছয় মাসের টাকা যাবে। অর্থাৎ গত বছরের (২০২০ সাল) জুন থেকে ডিসেম্বরের অর্থ এ কিস্তিতে দেয়া হবে। তিনি বলেন, যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় পাইলটিং করা হবে। এতে যদি সব রিপোর্ট পজিটিভ থাকে তাহলে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে উপবৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দেয়া হবে। মূলত প্রতারক চক্রের প্রতারণা এড়াতে এ কৌশল। আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করেছি। সবার সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। ইউসুফ আলী জানান, এ বকেয়া ছয় মাসের অর্থ নিরাপদভাবে পাঠানোর পর পরবর্তী তিন মাসের অর্থ পাঠানো হবে। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের অর্থ পাঠানো হবে। এটি কার্যকর করা হবে আগামী মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে। করোনার মধ্যে প্রাথমিকের উপবৃত্তি বিতরণের এই প্রকল্প বন্ধ ছিল প্রায় এক বছর। পরে গত ডিসেম্বরে নগদের সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। চুক্তির তিন মাসের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের মায়ের তথ্যসহ ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আরেক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস শিওর ক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করত সরকার। এতে প্রতি হাজার টাকার উপবৃত্তি বিতরণে সাড়ে ২১ টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ক্যাশ-আউট চার্জ লাগত। এখন সব মিলিয়ে নগদে প্রতি হাজারে সরকারের লাগছে সাত টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নগদের মাধ্যমে প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপবৃত্তির টাকা মোবাইলে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই প্রতারকচক্র দেশের বিভিন্ন স্কুলে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দেয়া শুরু করে। কখনো নগদের এজেন্ট, কখনো শিক্ষা কর্মকর্তা বা প্রধান শিক্ষক পরিচয় দিয়ে পিন নম্বর, ওটিপি বা উপবৃত্তির টাকা কম গেছে বলে তাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য চান। আরও টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে বলে ওটিপি চাওয়া হয়। অনেক অভিভাবক না বুঝে সব তথ্য প্রতারকদের দিয়ে দেন। এরপর অভিভাবকদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। প্রতারণার বিষয়টি উপবৃত্তি প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়া সবাইকে সর্তক থাকতে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দুই দফা চিঠি জারি করা হয়। চিঠিতে যেখানেই প্রতারণার খবর পাওয়া যাবে সেখানে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে বলা হয়। সেই সঙ্গে নগদকে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা আরও বেশি করে চালাতে বলা হয়।
Leave a Reply